Wednesday, November 24, 2010

Special winter care for Men

শীতকাল তার রুক্ষ বৈরিতা নিয়ে আসি আসি করছে। সেই তো ফাটা ঠোঁটে ভারি কষ্টের হাসি, ত্বক শুকনো চড়চড়ে হয়ে পড়া, গোড়ালি ফেটে চামড়া উঠে এক বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার—এতে ছেলেদেরও ভুগতে হয় বৈকি। রোজকার যত্নের পাশাপাশি শীতে পুরুষদেরও কিছু বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন। এ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন হেয়ারোবিকসের প্রধান পরিচালক ও রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন।


মডেল: সঞ্জয়


ত্বক
‘শীতে ত্বক বেশি শুষ্ক হয়ে যায়, ত্বকে র‌্যাশও দেখা দিতে পারে। পুরুষেরা বাইরে যান নিয়মিত, রোদে থাকেন বেশি। তার ওপর পরিবেশ রুক্ষ থাকায়, প্রচুর ধুলা থাকায় রোমকূপে ময়লাও বেশি জমে। তাই শীতকালীন পরিচর্যার প্রথম ও শেষ কথা হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, যার শুরুটাই হলো ক্লেনজিং—জানান তানজিমা। ক্লেনজিং একটি দৈনিক প্রক্রিয়া। প্রতিদিন সকালে তাই মুখ ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করুন। কোনো মাইল্ড ফেসওয়াশ বা পুরুষদের জন্য তৈরি ফেসওয়াশগুলো ব্যবহার করতে পারেন। ক্রিম-সমৃদ্ধ কিছু ফেসওয়াশও বাজারে পাবেন, যা শীতে শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব উপকারী। মুখের ত্বক পরিষ্কারে ব্যবহার করতে পারেন কুসুম গরম পানি। মুখ ধোয়ার পর ত্বকের টানটান ভাব দূর করতে ত্বকে ভেজা ভাব থাকা অবস্থায়ই আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার লাগান।
ত্বকের টানটান ভাব বেশি হলে প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। গুঁড়া দুধ, মধু, আমন্ড অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকে আর্দ্রতার জোগান দিতে সপ্তাহে দু-তিনবার দিতে পারেন এটা।
ত্বক বেশি খসখসে হলে এ প্যাকটি লাগান, জ্বাল না দেওয়া দুধ অর্থাৎ কাঁচা দুধে গোলাপের পাপড়ি এবং খেজুর ভিজিয়ে প্রথমে নরম করে নিন। তারপর একসঙ্গে পেস্ট বানান। এবার এতে চন্দন গুঁড়া (বাজারে পাবেন) মিশিয়ে মিনিট দশেক মুখে লাগিয়ে রাখুন। এই প্যাক ত্বক নরম করে। ক্লিনজিংয়ের পর ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও এই প্যাক ব্যবহার করা যায়।
কালো দাগ-ছোপ থাকলে এই দুটি প্যাক পরপর ব্যবহার করুন—
পাকা টমেটো, কাঁচা হলুদের রস, ভুসিসমৃদ্ধ গমের আটা বা গমের গুঁড়া মিশিয়ে মুখ, হাত, ঘাড়, গলার কালো দাগের ওপর ১৫ মিনিট রেখে গোলাপপানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি শুধু লাগিয়ে রাখতে হবে, ঘষা যাবে না। এরপর পাকা পেঁপে, মধু, লেবুর রস, কাঁচা দুধের মিশ্রণ লাগিয়ে কিছুটা ম্যাসাজ করে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সুফল পেতে হলে এই প্যাক দুটো অবশ্যই পরপর লাগাতে হবে।
মসুর ডাল বাটা, শসার রস ১৫-২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে চেহারায় তরতাজা ভাব আসবে।
ব্রণের সমস্যা থাকলে কাঁচা হলুদের রস, মুলতানি মাটি, তুলসী পাতা পেস্ট করে মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ঠোঁট
ছেলেদের ঠোঁটফাটা উপশমে বাজারে যে কোকো-বাটার বা গ্লিসারিন সমৃদ্ধ লিপবাম পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করুন। ফাটা বন্ধ করতে মধু, গ্লিসারিন মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে রাতে ঘুমান।

চোখ
শসা ও আলুর রসে টি ব্যাগ ডুবিয়ে রাখুন। রসের মিশ্রণটি চোখের কোলে কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।

হাত-পা
শীতে তেলগ্রন্থিগুলো থেকে তেল কম নিঃসারিত হয় বলে শরীর ও হাত-পায়ের ত্বক শুকনো হয়ে যায়। গোসলের পরই হালকা হাতে ভেজা ত্বকে অলিভ অয়েল বা পানিমিশ্রিত গ্লিসারিন ব্যবহার করলে ত্বক অনেকক্ষণ আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে। গোড়ালি ফাটার সমস্যা বেশি থাকলে বাজারে যেসব পা-ফাটারোধক ক্রিম পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করুন।
শোয়ার আগে প্রতিদিন আঙুলের ফাঁকে ও পায়ের পাতায় অলিভ অয়েল বা বেবি অয়েল ম্যাসাজ করুন। গ্লিসারিন ও গোলাপজল মিশিয়েও পায়ে দিতে পারেন, তাতে পা নরম থাকবে। এরপর মোজা পরে শুয়ে পড়ুন। পারলারে গিয়ে পেডিকিওর, মেনিকিওর, হ্যান্ড ও ফুট স্পা করিয়ে নিলে শীতকালে খুব উপকার পাবেন।

শেভিং
ত্বক খানিক ভিজিয়ে নিয়ে শেভ করুন। শেভ শেষে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। যাঁদের বেশি শুষ্ক ত্বক তাঁরা প্রথমে ক্লিনজিং করে লোশন লাগিয়ে নিন। এরপর শেভিং ফোম দিয়ে শেভ করুন। তাতে ত্বক নরম থাকবে। বাজারে আফটার শেভ বাম পাওয়া যায়। শীতে শেভিংয়ের পর আফটার শেভ বাম ভালো কাজে দেবে। এর পরও ত্বক শুষ্ক লাগলে আবার ময়েশ্চারাইজার বা লোশন লাগাতে পারেন।

চুল
শীতের সময় রোদে বেশিক্ষণ থাকার ফলে, গরম পানিতে গোসল এবং পানি কম খাওয়ার কারণে চুল রুক্ষ হয়ে যায়। মাথার তালু আর চুল আর্দ্রতা হারাতে শুরু করে। রুক্ষ চুলে সুন্দর স্টাইল দেওয়াটাও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। শীতে খুশকিও অন্যতম বড় উপদ্রব। খুশকির ফলে মাথার তালু তেলতেলে, চিটচিটে হয়ে যায়, চুল পড়ে ও খসখসে হয়ে যায়। চুলে গরম পানি দেবেন না। রোদের হাত থেকে চুল বাঁচাতে না-হয় টুপি পরুন। চুল শুকাতে ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না। শীতে হেয়ার স্টাইলিং ও সেটিংয়ের পণ্যগুলো, যেমন জেল ইত্যাদি যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার অবশ্যই ব্যবহার করুন। কন্ডিশনার চুলে সুরক্ষার আস্তর তৈরি করে চুলকে মজবুত করে তোলে। এ জন্য প্রোটিন ও তেল-সমৃদ্ধ সব কন্ডিশনার ব্যবহার করা যেতে পারে। টক দইও ভালো কন্ডিশনার। বেশি খুশকি থাকলে সপ্তাহে একবার মেহেদিপাতা বাটা, টক দই, একটা ডিমের সাদা অংশ, আধা চা-চামচ মেথি বাটা মিশিয়ে আধা ঘণ্টা মাথার তালুতে লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন।

ফেসিয়াল
শীতে ত্বক রোদে পোড়ে বেশি। রোদে পোড়া ত্বক ও ব্রণের দাগ মিলাতে সানবার্ন ফেসিয়ালে উপকার পাবেন। যাঁদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ছে ও ভাঁজ পড়া শুরু হচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা অ্যান্টিএজিং, থার্মোহার্ব, অক্সিজেন ও গ্যালভানিক ফেসিয়াল করতে পারেন। ব্রণের জন্য অ্যাকনি ও আয়ুর্বেদিক ফেসিয়াল করুন। মেছতার সমস্যা থাকলে এ জন্য বিশেষ যে ফেসিয়াল আছে, পারলারে তা করুন। স্বাভাবিক ত্বক হলে তার জন্য গোল্ড, সিলভার ও পার্ল ফেসিয়াল উপযুক্ত। ফ্রুট, ফ্লাওয়ার ও ভেজিটেবল ফেসিয়াল সবাই করতে পারেন।

No comments:

Post a Comment